ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে পদত্যাগ করে গত ৫ আগস্ট দেশ ছাড়েন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তার পদত্যাগের পর নোবেলবিজয়ী অর্থনীতিবীদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে প্রধান করে অন্তর্বর্তী সরকার গঠন করা হয়েছে। বর্তমানে অন্তর্বর্তী সরকারে কাছে দ্রুত নির্বাচনের দাবি জানিয়েছে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল। এমন পরিস্থিতিতে শেখ হাসিনা নির্বাচনে লড়বেন কিনা তা জানিয়েছেন তার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়।
বৃহস্পতিবার (০৩ আক্টোবর) প্রভাবশালী মার্কিন সাময়িকী টাইমস ম্যাগাজিনে সাক্ষাৎকার দিয়েছেন সজীব ওয়াজেদ জয়। সেখানে তিনি এ বিষয়ে কথা বলেন।
শেখ হাসিনার নির্বাচনে অংশগ্রহণের বিষয়ে জয় বলেন, তার নির্বাচনে লড়ার বিষয়ে এখনও কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।
কোটা আন্দোলনের প্রসঙ্গে পারিবারিক হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপের আলোচনার প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, আমরা কোটা মুভমেন্ট দেখে হতবাক হয়ে গেছিলাম। এমনকি আমি বলেছিলাম, ৩০ শতাংশ কোটা অনেক বেশি। এটি আমাদের কমিয়ে পাঁচ শতাংশে নামিয়ে আনা উচিত। তখন কেউ একজন বলেন যে আমরাও মুক্তিযোদ্ধাদের নাতি-নাতনি। তখন আমি মজা করে উত্তর দিয়েছিলাম, সেজন্যই আমি ৫ শতাংশ ছেড়ে দিয়েছি!
জয় বলেন, তার মা দেশের পরিস্থিতি দেখে বেশ বিচলিত এবং হতাশ। কেননা গত ১৫ বছরে তার সমস্ত কঠোর পরিশ্রম অনেকটাই ব্যর্থ হতে চলেছে।
নির্বাচনে নিজের অংশগ্রহণের বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নেননি জানিয়ে তিনি বলেন, আমার কখনই রাজনৈতিক উচ্চাকাঙ্ক্ষা ছিল না। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে কে জানে? আমি এখনও কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি।
এর আগে নির্বাচন নিয়ে মার্কিন সংবাদমাধ্যম এনপিআরের এক সাক্ষাতকারে ড. ইউনূসের কাছে জানতে চাওয়া হয় যে সেনাবাহিনী বলছে অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদ হবে ১৮ মাস। অন্যদিকে বিরোধী দলগুলো নভেম্বরে নির্বাচনের দাবি করে আসছে। এমন পরিস্থিতে আপনার জন্য ১৮ মাস সময় পর্যাপ্ত কিনা।
এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, মানুষ এই সংখ্যাগুলো ছুড়ে ফেলে দিচ্ছে। যত মাস বা বছর প্রয়োজন জনগণ দিতে প্রস্তুত রয়েছে। কেউ কেউ আবার বলছে যে এটি দ্রুত করা উচিত, কারণ আপনি যদি দীর্ঘ এবং দীর্ঘায়িত করেন তাহলে আপনি অজনপ্রিয় হবেন এবং সবকিছু এলোমেলো হয়ে যাবে। অবার কেউ কেউ বলছে, না, আপনাকে সংস্কার শেষ করতে হবে। সুতরাং আপনি এই দীর্ঘ সময় ধরে থাকুন। কারণ আমরা সবকিছু ঠিক না করে বাংলাদেশ ২.০ এ যেতে চাই না। তাই এই নিয়ে বিতর্ক চলছে।
তিনি বলেন, সংস্ককরণ ২ অর্থ এটাই। আমরা পুরোনো স্টাইলে ফিরে যেতে চাই না। তাহলে এত জীবন দেওয়ার কী অর্থ থাকল। এর কোনো মানে নেই। কারণ আমরা যা করেছি, সবকিছু ধ্বংস করেছি। তাই আমাদের একটি নতুন নির্মাণ শুরু করতে হবে।
এরও আগে জাপানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন এনএইচকের দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ড. ইউনূস বলেন, যত দ্রুত সম্ভব প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষে নির্বাচনের আয়োজন করা হবে। তিনি বলেন, অন্তবর্তী সরকারে মূল লক্ষ্য সংস্কারকাজ ও যত দ্রুত সম্ভব জাতীয় নির্বাচনের আয়োজন অন্তর্বর্তী সরকারের মূল লক্ষ্য। তাদের দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকার উদ্দেশ্য নেই।
ড. ইউনূস বলেন, আমরা এখানে দীর্ঘদিন থাকতে আসিনি। আমাদের কাজ যতদ্রুত সম্ভব নির্বাচন দেওয়া। আমাদের মূল লক্ষ্য হলো দেশ সংস্কার ও সুষ্ঠুভাবে নির্বাচনের আয়োজন করা। আমরা যত দ্রুত সম্ভব তা বাস্তবায়ন করব। অন্তর্বর্তী সরকারের ব্যর্থ হওয়ার কোনো সুযোগ নেই।