এম.মোরছালিন,বরগুনা:
জরায়ুমুখ ক্যান্সার প্রতিরোধে দেশব্যাপী হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাস (এইচপিভি) টিকাদান ক্যাম্পেইন (চূড়ান্ত পর্যায়) শুরু করেছে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার এবারের লক্ষ্যমাত্রা সারাদেশে ৬২ লাখেরও বেশি মেয়েকে টিকা প্রদান করা। তার ধারাবাহিকতায় বরগুনা জেলা ৩০ হাজারের অধিক টিকা প্রদান করা হয়।
জরায়ু মুখের ক্যান্সার প্রতিরোধে সরকারি হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাস (এইচপিভি)টিকা নেওয়ার পরে কয়েকজন শিক্ষার্থী শ্বাসকষ্টসহ অস্বাভাবিক আচারন করতে শুরু করে। পরে সময় অতিবাহিত হওয়ার সাথে সাথে শিক্ষার্থীদের মধ্যে অসুস্থতার সংখ্যা বাড়তে থাকলে তাদের হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। ঘটনাটি বরগুনা সদর উপজেলার রায়েরতবক জে এস মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের।
জরায়ুমুখ ক্যানসার প্রতিরোধে কিশোরীদের গত বছরের ধারাবাহিকতায় এ বছরও টিকা দেওয়া শুরু হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার (২৪ অক্টোবর) থেকে সাতটি বিভাগে স্কুল ও স্কুলের বাইরে বিনা মূল্যে এক ডোজ হিউম্যান পেপিলোমা ভাইরাস (এইচপিভি) টিকা কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এ কার্যক্রমের অংশ হিসেবে বরগুনা সদর উপজেলার রায়েরতবক জে এস মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে এইচপিভি টিকাদান কর্মসূচি চলাকালে ১৬ জন স্কুলছাত্রী অসুস্থ হয়ে পড়ে।
রবিবার (৩ নভেম্বর) দুপুর আড়াইটার দিকে বরগুনা জেনারেল হাসপাতালের জরুরী বিভাগে চিকিৎসা নিচ্ছেন অসুস্থ হয়ে পরা শিক্ষার্থীরা। তবে ভয় ও আতংকে শিক্ষার্থীর অসুস্থ হতে পারেন বলে নিশ্চিত করেছেন বরগুনা সিভিল সার্জন ডাঃ প্রদীপ চন্দ্র মন্ডল।
অত্র বিদ্যালয়ের ৮ ম শ্রেনীর সুমা বলেন, টিকা দেওয়ার পরই অনেকে শিক্ষার্থীরা শ্বাস কষ্টের কথা বলতে থাকে এক পর্যায়ে অনেকে অসুস্থ হয়ে পড়ে প্রথমে এক গাড়িতে ৯ জনকে বরগুনা জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হয়।
অসুস্থ হওয়া নবম শ্রেণীর শিক্ষার্থী আয়শার ভাই মো: মানিক মিয়া, আমরা বাড়িতে ছিলাম হঠাৎ স্কুল থেকে ফোন আসে আমার বোন অসুস্থ। হাসপাতালে এসে দেখি অনেক বাচ্চা অসুস্থ হয়ে পড়ে আছে। তাদের সকলের একই সমস্যা। অনেকেই শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে, অনেকের হুস নাই।
অসুস্থ ৮ম শ্রেণির শিক্ষার্থী মনিরা’র খালা সাহিদা বেগম বলেন , স্কুলের পাশেই আমার বাসা হঠাৎ দেখলাম গাড়িতে করে বাচ্চাদেরকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। খোঁজ নিয়ে জানতে পারি আমার বোনের মেয়েকেও হাসপাতালে আনা হয়েছে। আমি এসে দেখি মনিরা অক্সিজেন লাগানো অবস্থায় শুয়ে আছে।
রায়েরতবক জেএ স মাধ্যমিক বিদ্যালয় এর প্রধান শিক্ষক আবু জাফর বলেন, সারা বাংলাদেশের ন্যায় আমার স্কুলেও টিকা দেওয়া শুরু হয়। প্রথমে সব ঠিক থাকলেও কিছুক্ষণ পরে বাচ্চারা অসুস্থ হয়ে পড়লে তাদেরকে হাসপাতালে পাঠানো হয়। আমরা সর্বক্ষণিক বাচ্চাদের পাশে আছি। কর্তব্যরত চিকিৎসক বলেছে টেনশনের কারণ নেই সব ঠিক হয়ে যাবে।
বরগুনা জেনারেল হাসপাতালের জরুরী বিভাগের কর্তরত চিকিৎসক চৌধুরী নওশিন ফেরদৌস বলেন, আতংকের কারণে এমনটি হতে পারে। তবে এটা ধরনের কোন সমস্যা না।
বরগুনা সিভিল সার্জন ডাঃ প্রদীপ চন্দ্র মন্ডল বলেন, এই টিকা দীর্ঘদিন যাবৎ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে দিয়ে আসা হয়েছে এবং যথাযথ নিয়ম মেনেই শিক্ষার্থীদের টিকা দেওয়া হচ্ছে। তাতে বড় ধরনের কোন দুর্ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি। এদের মধ্যে কয়েকজন অসুস্থ হয়ে পড়ে এবং একটা বাচ্চা কান্নাকাটি শুরু করে। পরে আরও একটা বাচ্চা কান্নাকাটি শুরু করে এবং আতঙ্কিত হয়ে পড়ে। এটি হয়েছে মূলত আতঙ্কের কারণে, ভ্যাকসিনের কারণে না। এটা একটি প্যানিক দুর্ঘটনার ঘটনা ঘটে। তবে চিন্তার কোন কারণ নেই। হাসপাতালে আগে থেকেই নির্দেশনা দেওয়া আছে, টিকা নেওয়ার পরে অসুস্থ হয়ে কেহ হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসলে তাদের যেন আগে চিকিৎসা দেওয়া হয়।
বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার ২৪ (অক্টোবর) বরিশাল, চট্টগ্রাম, খুলনা, ময়মনসিংহ, রাজশাহী, সিলেট এবং রংপুর বিভাগে হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাস (এইচপিভি) টিকাদান ক্যাম্পেইনেরচূড়ান্ত পর্যায়ের কার্যক্রম শুরু করেছে। দ্যা ভ্যাকসিন এলায়েন্স (গ্যাভি), ইউনিসেফ এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা(ডাব্লিউএইচও)-এর সহায়তায় ১০-১৪ বছর বয়সী ৬২ লাখেরও বেশি মেয়ের জরায়ুমুখ ক্যান্সার প্রতিরোধে এই টিকা প্রদানের কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে।
টিকাদান ক্যাম্পেইনের চূড়ান্ত পর্যায়ের এই কার্যক্রম সারা দেশ জুড়ে এক মাসব্যাপী চলবে। ক্যাম্পেইনের প্রথম পর্যায়ে, ২০২৩ সালের অক্টোবর মাসে,ঢাকায় ১৫ লাখেরও বেশি মেয়েকে এইচপিভি টিকা প্রদান করা হয়েছে।