বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে ২ মার্চ ‘জাতীয় পতাকা দিবস’ হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, অতীতের সরকার যদি সঠিক ইতিহাস নির্ধারণ না করে থাকে তাহলে আপনারা সঠিক ইতিহাস নির্ধারণ করুন। তারই ধারাবাহিকতায় যথাযথ মর্যাদা, স্বীকৃত দিয়ে ২ মার্চ জাতীয় পতাকা দিবস পালন করুন। এতে শুধু আ স ম আব্দুর রব নয়, দেশের প্রতিটি মানুষ গৌরবান্বিত হবেন।
শনিবার (২৩ নভেম্বর) সকালে জাতীয় প্রেস ক্লাবে ২ মার্চ পতাকা দিবস ঘোষণার দাবিতে প্রতিবাদী সমাবেশ তিনি এসব কথা বলেন। আয়োজন করে ‘হৃদয়ে পতাকা ২ মার্চ’ নামের সামাজিক সংগঠন।
মঈন খান বলেন, অবাক লাগছে স্বাধীনতার ৫৩ বছর পর আমাদের কেন জাতীয় পতাকা দিবসের ঘোষণার দাবি জানাতে আলোচনা করতে হবে। ১৯৭১ সালের ২ মার্চ কলাভবনের সামনে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেছিলেন আ স ম আব্দুর রব। ওইদিন পূর্ব পাকিস্তানের গণতন্ত্রকামী মানুষের প্রতিবাদের মুখে তৎকালীন সংসদ অধিবেশন বাতিল হয়েছিল। সেদিনের পতাকা শুধু লাল-সবুজের পতাকা ছিল না, কেন্দ্র ছিল সোনালি বাংলাদেশ। তখনো কিন্তু স্বাধীনতার ঘোষণা হয়নি। ইতিহাস বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, স্বাধীনতার ঘোষণার আগেই স্বাধীন দেশের পতাকা উত্তোলন হয়েছিল। এটা একটা ইউনিক। সেদিন হাজার হাজার ছাত্র-জনতা রাজপথে নেমেছিল। গত ৫ আগস্টের ছাত্র-জনতার আন্দোলনের চেয়ে আলাদা ছিল না।
তিনি বলেন, সেদিন আ স ম আবদুর রবের সঙ্গে ছিলেন শাহাজাহান সিরাজ, নুরে আলম সিদ্দিকী ও আব্দুস কুদ্দুস পাটোয়ারী। স্বাধীনতার ইতিহাসে তাদের আমরা কতটুকু সম্মান জানাতে পেরেছি?
বিএনপির এই অন্যতম সিনিয়র নেতা বলেন, ১৯৪৮ সালে ছাত্ররা ‘রাষ্ট্র ভাষা বাংলা চাই’ উচ্চারণের মধ্যে স্বাধীনতার বীজ বপন করেছিল। ১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলন দেখেছি, ১৯৬২ সালে শিক্ষানীতির বিরুদ্ধে আন্দোলন দেখেছি। সেদিন হামিদুর রহমানের শিক্ষানীতির বিরুদ্ধে ঢাকার রাজপথে হাজার হাজার ছাত্র আন্দোলন করেছিল। সেদিন ছাত্ররা বলেছিল- এই শিক্ষানীতি ছিল ধনী শ্রেণির জন্য, পূর্ব পাকিস্তানের জন্য নয়। এরপর ৬৯ এবং ৭১ সাল ছাত্র বিদ্রোহের ইতিহাস। লাখ লাখ মানুষের বুকের রক্তের ওপর দিয়ে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে। সে সময়ে বাংলাদেশের মানুষ একটাই কথা বলেছিল, আমরা গণতন্ত্র চাই।
মঈন খান আরও বলেন, তারই ধারাবাহিকতায় বিগত ১৫ বছর ধরে ফ্যাসিস্ট সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছে জনগণ। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মধ্যে দিয়ে স্বৈরাচার শেখ হাসিনা পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছে। এসব ইতিহাস একইসূত্রে গাঁথা। বাংলাদেশের ইতিহাসের ছাত্ররা যে ভূমিকা পালন করেছে তা অবিস্মরণীয়। এটা বিশ্ব ইতিহাসের অংশ হিসেবে থাকবে বলে আমি বিশ্বাস করি। আজকে নতুন করে লাল-সবুজের পতাকা থেকে তরুণ ছাত্রদের শিক্ষা নেওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
আয়োজক সংগঠনের সভাপতি লেখক ও কবি শাহানা সুলতানার সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক মো. মঞ্জুর হোসেন ঈসার সঞ্চালনায় আরও বক্তব্য দেন জেএসডির সাধারণ সম্পাদক শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন, সিনিয়র সহ-সভাপতি মিসেস তানিয়া রব, আয়োজক সংগঠনের প্রধান উপদেষ্টা এসএম সামসুল আলম নিক্সন, গণতান্ত্রিক পার্টির সাংগঠনিক সম্পাদক আমির হোসেন আমু প্রমুখ।
সভাপতির বক্তব্যে শাহানা সুলতানা বলেন, বাংলাদেশের শুরু হয় ২ মার্চ জাতীয় পতাকা উত্তোলনের মধ্য দিয়ে। আমাদের কেন জাতীয় পতাকা দিবস চাইতে হবে? এটা জাতির জন্য অত্যন্ত লজ্জাকর। আজকের এই দিন থেকে আমরা যাত্রা শুরু করলাম।
২ মার্চ জাতীয় পতাকা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি দিতে আগামী ৭ দিনের মধ্যে রাষ্ট্রপতি ও প্রধান উপদেষ্টার কাছে স্মারকলিপি দেবে সংগঠনটি।