লেবাননে একের পর এক হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েল। দেশটির এ হামলায় একের পর এক প্রাণ হারাচ্ছে মানুষ। জবাবে পাল্টা হামলা চালাচ্ছে লেবাননের প্রতিরোধ যোদ্ধা হিজবুল্লাহ। এবার তারা ইসরায়েলি ঘাঁটিতে অত্যাধুনিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে।
শুক্রবার (০৯ নভেম্বর) আলজাজিরার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
হিজবুল্লাহ জানিয়েছে, সেন্ট্রাল ইসরায়েলে একটি বিমানঘাঁটিকে নিশানা করে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে তারা। এক মাসের বেশি সময় ধরে চলা পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে গোষ্ঠীটির সবশেষ হামলার ঘটনা এটি।
গোষ্ঠীটি জানিয়েছে, তেল আবিবের দক্ষিণে তেল নফ বিমানঘাঁটিতে এ হামলা চালানো হয়েছে। হামলায় অত্যাধুনিক ক্ষেপণাস্ত্রের একটি বহর ছোড়া হয়েছে।
আলজাজিরার জানিয়েছে, ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে এ ঘটনায় তাৎক্ষণিক কোনো প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। তবে তারা জানিয়েছে, পশ্চিমাঞ্চল এবং আপার গ্যালিলি অঞ্চলে বেশ কয়েকটি ড্রোন ভূপাতিত করা হয়েছে।
সেন্টার ফর স্ট্রাটেজিক অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজের ( সিএসআইস) তথ্যমতে, হিজবুল্লাহর কাছে অন্তত ১০ ধরনের ক্ষেপণাস্ত্র রয়েছে। এরমধ্যে সবচেয়ে কম পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র হলো ফালাক-১। এটি ১১০ কিলোমিটার দূরের লক্ষ্যবস্তুতে হামলা করতে সক্ষম। এছাড়া সর্বাধুনিক ক্ষেপণাস্ত্র হলো এসসিইউডি বি/সি। এ ধরনের ক্ষেপণাস্ত্র ৫৫০ কিলোমিটার দূরের লক্ষ্যবস্তুকে নিশানা করতে পারে।
বিবিসির এক বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, সর্বাত্মক যুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে মধ্যপ্রাচ্য। গত এক বছরে বিশ্বে অনেক বিপদের মুহূর্ত এসেছে। তবে এবারেরটি সবচেয়ে ভয়াবহ। সম্প্রতি লেবাননের সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহর নেতা হাসান নাসরুল্লাহ নিহত হয়েছেন। এরপর লেবাননে স্থল হামলা শুরু করেছে ইসরায়েল।
যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন পশ্চিমা ও আঞ্চলিক শক্তিগুলো উত্তেজনা কমানোর জন্য চাপ দিচ্ছে। জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ দ্রুত সংঘাত বন্ধের আহ্বান জানিয়েছে।
শিল্পোন্নত দেশগুলোর জোট জি-৭ এর পক্ষ থেকে সব পক্ষকে ধৈর্য ধরতে বলা হয়েছে; কিন্তু এখন পর্যন্ত সব প্রচেষ্টা ব্যর্থ। আগের যে কোনো সময়ের চেয়ে মধ্যপ্রাচ্য সর্বাত্মক যুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে চলে এসেছে। সম্প্রতি ঘটে যাওয়া এসব ঘটনার কারণে মূলত এ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে।
হিজবুল্লাহর প্রধান হাসান নাসরুল্লাহকে হত্যায় লেবাননের বৈরুতে গত ২৭ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় ইসরায়েল বোমা হামলা চালায়। সেখানে ব্যাপক বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। অনেক আবাসিক ভবন ধসে পড়ে। মাটিতে বড় গর্ত সৃষ্টি হয়। আকাশ ধুলাবালি ও ধোঁয়ায় ভরে ওঠে। পুরো লেবানন থেকে ওই দৃশ্য দেখা যায়। এ হামলা হয় মাটির নিচে থাকা হিজবুল্লাহর বাংকার লক্ষ্য করে। এ হামলায় নিহত হন হিজবুল্লাহ নেতা হাসান নাসরুল্লাহ। ইসরায়েলের এক সপ্তাহ ধরে চালানো হামলায় ৫০০ জনের বেশি মানুষ নিহত হওয়ার পর নাসরুল্লাহর মৃত্যুর খবর আসে।
তারও এক সপ্তাহ আগে এই সশস্ত্র গোষ্ঠীটিকে লক্ষ্য করে পরপর অসংখ্য ওয়াকিটকি এবং পেজার বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। এতে কমপক্ষে ৩২ জন নিহত এবং তিন হাজার জনের বেশি মানুষ আহত হয়েছিল।